April 19, 2024, 7:42 am

রাজধানী হতে বিভিন্ন অপরাধ, লুটপাটের ৪ সদস্য গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক।
বিগত ১৫ বছর যাবত রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আগত প্রায় তিন শতাধিক প্রবাসীকে কৌশলে অজ্ঞান করে সর্বস্ব লুট করে নেয়া চক্রের মূলহোতা ও ১৫টির অধিক মামলার আসামী মোঃ আমির হোসেন’কে তার ০৩ সহযোগীসহ রাজধানীর বিমানবন্দর ও কদমতলী থানা থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব; লুটকৃত স্বর্ন ও মোবাইল এবং অজ্ঞান করতে ব্যবহৃত উপকরণ উদ্ধার।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অজ্ঞান পার্টি চক্রের তৎপরতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের নেশাজাতীয় দ্রব্যের বিষক্রিয়ায় অনেকের মৃত্যু পর্যন্ত হচ্ছে। অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা বিমানবন্দর, রেলষ্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, ব্যাংক ইত্যাদি স্থানে সাধারণ যাত্রীদের/ব্যাংকে আগত গ্রাহকদের টার্গেট করে থাকে। গত ০২ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখ কুয়েত প্রবাসী জনৈক ব্যক্তি হযরত শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়। এ সময়ে এয়ারপোর্টে পূর্ব থেকে ওত পেতে থাকা অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা তাকে টার্গেট করে ও ঢাকা থেকে বগুড়া যাওয়ার পথিমধ্যে তাকে অজ্ঞান করে তার সর্বস্ব লুট করে নিয়ে যায়। এ সংক্রান্তে ভিকটিম বাদী হয়ে গত ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখ উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং ১২ তারিখ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২। বিষয়টি বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচিত হয়। ফলশ্রæতিতে র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে এবং হযরত শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের নিকট হতে তথ্য সংগ্রহ করে।


এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র‌্যাব-১ এর একটি আভিযানিক দল রাজধানীর বিমানবন্দর থানা ও কদমতলী থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে অজ্ঞান পার্টি চক্রের মূলহোতা (১) মোঃ আমির হোসেন (৫২), পিতা- মৃত শুকুর আলী হাওলাদার, জেলা- বরিশাল, ও তার সহযোগী (২) মোঃ লিটন মিয়া @মিল্টন (৪৮), পিতা- মনসুর হাওলাদার, জেলা-বরিশাল, (৩) আবু বক্কর সিদ্দিক @পারভেজ (৩৫), পিতা-হাজী মোঃ আব্দুস সালাম, জেলা- ফেনী, এবং (৪) জাকির হোসেন (৪০), পিতা- মৃত আলী হোসেন, জেলা-পটুয়াখালী’দেরকে গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার করা হয় মোবাইল ফোন, অজ্ঞান করার কাজে ব্যবহৃত ট্যাবলেট, যাত্রীর ছদ্মবেশ ধারণে ব্যবহৃত লাগেজ ও চোরাইকৃত স্বর্ণ (যার রুপ পরিবর্তন করতে গলানো হয়েছে)।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানায়, তারা সংঘবদ্ধ অজ্ঞান পার্টি চক্রের সদস্য। এই চক্রের সদস্য সংখ্যা ৮-১০ জন। তারা বিভিন্ন পেশার আড়ালে বিগত ১৫ বছর যাবত পারস্পারিক যোগসাজসে রাজধানীর বিমানবন্দর টার্মিনালে ওত পেতে থাকে এবং বিদেশ হতে আগত ব্যক্তিদের টার্গেট করার লক্ষ্যে বিমানবন্দরের টার্মিনালে হাতে পাসপোর্ট ও লাগেজ নিয়ে প্রবাস ফেরত যাত্রীর ছদ্মবেশ ধারণ করে। এটি মূলত তাদের একটি কৌশল। পরবর্তীতে এই চক্রটি এমন প্রবাসী যাত্রীদের টার্গেট করত, যার জন্য অপেক্ষমান কোন আত্মীয় স্বজন বা গাড়ী নেই। তারা কৌশলে বিদেশ ফেরত ব্যক্তির সাথে কুশল বিনিময় করে চক্রের অন্য সদস্যদের তাদের নিকট আত্মীয় হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিত। পরবর্তীতে ভিকটিমের সহিত একই এলাকার ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত হয়ে তাদের সাথে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করত। পরবর্তীতে এই চক্রের সদস্যগণ সবাই একসাথে বাসের টিকেট কেটে যাত্রা শুরু করত। গাড়ী বা বাসে ভ্রমণের সময় চক্রের সদস্যগণ টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে কৌশলে চেতনানাশক ওষুধ মিশ্রিত বিস্কুট খাইয়ে অচেতন করত। পরবর্তীতে টার্গেটকৃত ভিকটিম অজ্ঞান হয়ে গেলে তার নিকট হতে যাবতীয় মালামাল নিয়ে চক্রটি পরবর্তী স্টেশনে নেমে যেত।

গত ০২ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখ ভোর বেলা কুয়েত প্রবাসী জনৈক ভিকটিম হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌছায়। অতঃপর চক্রটির একজন সদস্য বিমানবন্দর হতে জনৈক প্রবাসীকে অনুসরণ করতে থাকে। ভিকটিম উত্তরবঙ্গে যাওয়ার উদ্দেশ্যে আজিমপুর বাস স্ট্যান্ডে এসে পৌঁছায় এবং উত্তরবঙ্গগামী বাস কাউন্টারে টিকেট কাটতে গেলে কাউন্টারে পূর্ব থেকে প্রবাসী যাত্রীর ছদ্মবেশ নিয়ে থাকা গ্রেফতারকৃত আমির হোসেন ভিকটিমকে জানায় তার নিকট একটি অতিরিক্ত বাসের টিকেট রয়েছে। পূর্ব থেকে সাজিয়ে রাখা একটি লাগেজ ও কিছু কুয়েতি দিনার দেখিয়ে সে ভিকটিমকে আশ^স্ত করে যে সে নিজেও একজন প্রবাসী। ভিকটিম আমির হোসেনকে সরল বিশ্বাসের তার নিকট হতে টিকেট ক্রয় করে পাশের সীটে বসে বগুড়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। কিছুক্ষণ পরে চক্রের মূলহোতা আমির হোসেন ভিকটিমকে চেতনানাশক ওষুধ মেশানো বিস্কুট খেতে দেয়। ভিকটিম বিস্কুট খাওয়ার কিছুক্ষণ পরে অজ্ঞান হয়ে যায় এবং চক্রটি ভিকটিমের সকল মালামাল ও সম্পদ লুট করে নিয়ে পথিমধ্যে নেমে যায়। পরবর্তীতে বাসের সুপারভাইজার ভিকটিমকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে।

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার আমির হোসেন জানায় যে, সে বিমানবন্দর কেন্দ্রীক একটি অজ্ঞান পার্টি চক্রের মূলহোতা। সে মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করে। পরবর্তীতে সে বিমানবন্দর এলাকায় একটি ফাস্টফুডের দোকানে চাকুরীর আড়ালে বিগত ১৫ বছর যাবত এই অপকর্মের সাথে জড়িত। দীর্ঘ এই সময়ে সে প্রায় ৩০০ জন ভ‚ক্তভোগীকে অজ্ঞান করে তাদের নিকট হতে মূল্যবান মালামাল ও সম্পদ লুট করে নিয়েছে বলে জানায়। চক্রের আরো ৬-৭ জন বিভিন্ন সময়ে যুক্ত ছিল যার মধ্যে একাধিক সদস্য বর্তমানে কারাগারে অবস্থান করছে বলে জানায়। গ্রেফতারকৃত আমির হোসেন এর বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় ১৫টির অধিক মামলা রয়েছে এবং সে বারংবার কারাভোগ করেছে। বর্তমানে সে জামিনে রয়েছে।

গ্রেফতারকৃত লিটন তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করে এবং লেখাপড়া ছেড়ে দেয়। পরবর্তীতে সে মাইক্রোর ড্রাইভার পেশার আড়ালে দীর্ঘ ৩/৪ বছর যাবত আমিরের অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করে আসছে। ইতোপূর্বে সে একাধিকবার একই ধরণের মামলায় গ্রেফতার হয়েছিল। বিভিন্ন সময় চক্রটি কৌশলে প্রবাসী যাত্রীদের মাইক্রোবাসে পরিবহন করে সর্বস্ব লুট করে নেয়। তখন সে মাইক্রোবাসের চালনার দায়িত্বে থাকে। এছাড়াও সে বিভিন্ন সময় বিমানবন্দর হতে যাত্রীদের অনুসরণের কাজ করে থাকে।

গ্রেফতারকৃত আবু বক্কর@ পারভেজ ৮/৯ বছর বিভিন্ন জুয়েলারী দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করত। পরবর্তীতে গত ৬/৭ বছর পূর্বে নিজেই রাজধানীর শ্যামপুরে নিজের জুয়েলারীর দোকান প্রতিষ্ঠা করে। জুয়েলারী দোকানের আড়ালে সে বিগত ২/৩ বছর যাবত চক্রটির লুটকুত স্বর্ণ গ্রহণ, রুপ পরিবর্তন ও বিক্রয়ের সাথে জড়িত ছিল।

গ্রেফতারকৃত জাকির হোসেন ছাপাখানার ঠিকাদার হিসেবে কাজ করে। গত ৩/৪ বছর পূর্বে আমিরের মাধ্যমে এই চক্রে যোগ দেয়। সে লুটকৃত স্বর্ণালঙ্কার ও অন্যান্য মালামাল রাজধানীর বিভিন্ন জুয়েলারী দোকানসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রয়ের সাথে জড়িত ছিল।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :