May 11, 2024, 10:03 pm

রাজনীতিবিদ আতাউর রহমান খান কায়সারের মৃত্যুবার্ষিকী আগামীকাল

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, চট্টগ্রামের সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান, স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ, বরেণ্য আওয়ামী লীগ নেতা, সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব এবং কূটনীতিক আতাউর রহমান খান কায়সারের দ্বাদশ মৃত্যুবার্ষিকী আগামীকাল ৯ অক্টোবর রোববার।
সততার মূর্ত প্রতীক, মেধাবী, নির্লোভ, নিরহংকার, মহান দেশপ্রেমিক কায়সার ২০১০ সালের ২৮ আগস্ট সাংগঠনিক দায়িত্ব পালনে কক্সবাজার যাওয়ার সময় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। ২০১০ সালের ৯ অক্টোবর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জননেতা আতাউর রহমান খান কায়সার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। চট্টগ্রামের চন্দনপুরাস্থ বংশাল বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন।
মরহুম জননেতা আতাউর রহমান খান কায়সারের দ্বাদশ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সারা মাসব্যাপী দোয়া মাহফিল, দুঃস্থ ও এতিমদের মাঝে খাবার বিতরণ, শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্প ইত্যাদি কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। তার জ্যেষ্ঠ কন্যা বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান এমপি বাবার রুহের মাগফেরাত কামনায় সকলের দোয়া কামনা করেছেন।
আতাউর রহমান খান কায়সার ১৯৪০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম শহরের চন্দনপুরাস্থ পৈত্রিক আবাস ‘বংশালবাড়ি’-তে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আলহাজ্ব ইয়ার আলী খান দুই মেয়াদে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য ছিলেন। মাতা মরহুমা গুলশান আরা বেগম গৃহিনী ছিলেন। তার নানা খান বাহাদুর আব্দুস সাত্তার ছিলেন বঙ্গীয় আইন পরিষদ সদস্য। চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বারখাইন ইউনিয়নের তৈলারদ্বীপ গ্রামের বিখ্যাত ‘সরকার বাড়ি’ আতাউর রহমান খান কায়সারের পারিবারিক স্থায়ী আদি নিবাস।
আতাউর রহমান খান কায়সার ১৯৫৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে এস.এম হলে থেকে পড়াশুনা করেন এবং মেধাবৃত্তি অর্জন করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে ১৯৬২ সালে হামিদুর রহমান কুখ্যাত শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় একশন কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স ও এম এ ডিগ্রি লাভ করেন। চট্টগ্রামের তদানীন্তন চকবাজার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৬৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগদান করেন আতাউর রহমান খান কায়সার। ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন তিনি। ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে চট্টগ্রামের আনোয়ারা-বাঁশখালী-কুতুবদিয়া থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ সদস্য (এমএনএ) নির্বাচিত হন। নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বাঙালির অধিকার আদায়ে উত্তাল গণআন্দোলন সংগঠিত করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন তিনি। অতঃপর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মুজিবনগর সরকার কর্তৃক ১ নম্বর সেক্টরে রাজনৈতিক সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২ সালে গণপরিষদের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য হিসাবে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন বাংলাদেশ পুনর্গঠনকালীন ১৯৭২ থেকে ১৯৭৭ পর্যন্ত তিনি চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ থেকে ১৯৮৭- বাঙালির জাতীয় জীবনের ক্রান্তিকালে তিনি সর্বদা রাজপথে থেকে আন্দোলন-সংগ্রামে সম্পৃক্ত ছিলেন, ফলস্বরূপ ওই সময়ে দুইবার গ্রেফতার হয়ে এগারো মাস কারাভোগ করেন। তৎকালীন সামরিক শাসক দ্বারা বিভিন্ন সময় নির্যাতনের শিকার হন তিনি।
আশির দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করেন এবং ১৯৮৭ সালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামে সংঘটিত পরিকল্পিত হত্যাকান্ডের কলংকিত ঘটনায় পুলিশের গুলিতে অন্তত ২৪ জন নিহত হন, আহত হন দুই শতাধিক নেতা-কর্মী। সেদিন জননেত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে আতাউর রহমান খান কায়সারও আহত হন। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ঘোষণাপত্রের চূড়ান্ত খসড়া এবং ১৯৯১-৯২ সালে আওয়ামী লীগের নতুন অর্থনৈতিক পরিকল্পনার খসড়া প্রণয়নে ওতোপ্রতভাবে জড়িত ছিলেন তিনি। ১৯৯৬ সালে তৃতীয়বারের মতো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক নির্বাচিত হন আতাউর রহমান খান কায়সার।
১৯৯৭ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার এবং ১৯৯৯ সালে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত হিসেবে অত্যন্ত দক্ষতা ও সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন আতাউর রহমান খান কায়সার। ২০০২ সালে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত হন। জরুরি অবস্থা জারির পর এক এগারোর সঙ্কটময় সময়ে দৃঢ়চেতা ও শেখ হাসিনার অকুতোভয় সৈনিক আতাউর রহমান খান কায়সার সংস্কারপন্থীদের বিরুদ্ধে সাহসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে রাজপথ থেকে শুরু করে বিদেশি কূটনীতি এবং সরকারের উচ্চ পর্যায়ে শেখ হাসিনার মুক্তির জন্য প্রাণান্ত চেষ্টা করেন। কোন প্রকার লোভ-লালসা তাকে নিজ আদর্শ থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি।
আতাউর রহমান খান কায়সার চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা, চট্টগ্রাম ক্লাব, চট্টগ্রাম সিনিয়র্স ক্লাব, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, ডায়াবেটিক সমিতি, রোটারি ক্লাব, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল-সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত ছিলেন। আতাউর রহমান খান কায়সার যৌথভাবে ‘চক্রবাক’ ও ‘মুখর অরণ্য’ নামক দুইটি কাব্যগ্রন্থ সম্পাদনা করেছেন, যাতে তাঁর নিজস্ব কিছু কবিতা স্থান পেয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :