April 25, 2024, 4:13 am

শান্তি প্রতিষ্ঠায় অহিংসা সাম্য ও মৈত্রী

সংগ্রাম মিত্র কলকাতা , ভারত :

গৌতম বুদ্ধের আদর্শ ধারণ ও লালন করে প্রচার করেছেন। শান্তি ও সম্প্রীতির মাধ্যমে আদর্শ সমাজ গঠনই ছিল তাঁর একমাত্র লক্ষ্য। বুদ্ধ সত্য ও সুন্দরের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানবজগতকে আলোকিত করতে কাজ করে গেছেন। মূল্যবোধেবাংলাদেশকে শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে সবাই ভূমিকা রাখবেন বলে প্রত্যাশা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘মহামতি গৌতম বুদ্ধ আজীবন মানুষের কল্যাণে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় অহিংসা, সাম্য ও মৈত্রীর বাণী র অবক্ষয় রোধ ও সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁর জীবনাদর্শ ও শিক্ষা অনুসরণ করা প্রয়োজন।’

প্রধানমন্ত্রী শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে এসব কথা বলেন।

মহামতি গৌতম বুদ্ধের জন্ম, মৃত্যু ও বোধিজ্ঞান লাভের স্মৃতিবিজড়িত শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে তিনি বৌদ্ধ সম্প্রদায়সহ সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। হাজার বছর ধরে এ ভূখণ্ডে সব ধর্মের মানুষ উৎসবমুখর পরিবেশে নিজ নিজ ধর্ম নির্বিঘ্নে পালন করে আসছেন। বাংলাদেশের সংবিধানে সবার সমঅধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। এ দেশে ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। আমাদের সব ধর্মের মানুষ একত্রিত হয়ে বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবগুলো অত্যন্ত আনন্দ ও প্রীতির মাধ্যমে উদযাপন করে থাকে। আগামীতে বাংলাদেশের সম্প্রীতির চর্চা ও বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করতে আমাদের সবাইকে উদার হয়ে কাজ করতে হবে। আমরা সম্প্রীতির বাতাবরণে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে চাই।’

বুদ্ধ পূর্ণিমায় বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব মানুষের জীবনে সুখ, শান্তি সমৃদ্ধি ও মঙ্গল বয়ে আনুক এ কামনা করেন তিনি।
বুদ্ধ পূর্ণিমা, বুদ্ধ জয়ন্তী নামেও পরিচিত। এই দিনে বৌদ্ধ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা ‘ভগবান গৌতম বুদ্ধ’ জন্মগ্রহণ করেন। এ বছর বুদ্ধ জয়ন্তী বা বুদ্ধ পূর্ণিমা পালিত হচ্ছে ১৫ মে। বুদ্ধ পূর্ণিমার উত্সবটি ভারত এবং অন্যান্য এশীয় দেশগুলির হিন্দু এবং বৌদ্ধ উভয়ই পালিত হয়।

গৌতম বুদ্ধের পারিবারিক জীবন

গৌতম বুদ্ধ কপিলবস্তুর কাছে লুম্বিনীতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা শুদ্ধোধন ছিলেন শাক্যগানের প্রধান এবং মা মায়া দেবী বা মহামায়া ছিলেন কোলিয়া রাজবংশর কন্যা। গৌতম বুদ্ধের ছোটবেলার নাম ছিল সিদ্ধার্থ। তার জন্মের কিছু দিন পর তার মা মারা যান এবং তাকে তার মাসি গৌতমী লালন-পালন করেন। ১৬ বছর বয়সে তিনি শাক্য বংশের কন্যা যশোধরার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ছেলের নাম দেন রাহুল।

বুদ্ধের জীবনে চারটি বিষয়েের ব্যাপক প্রভাব ছিল:

– বয়স্ক ব্যক্তি
– অসুস্থ ব্যক্তি
– মৃত
– সন্ন্যাসী
তিনি তার সারথিকে এ সব বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, জীবনে বৃদ্ধ হলে প্রত্যেকেই অসুস্থ হয় এবং অসুস্থ হয়ে মারা যায়। সন্ন্যাসীর কথা জিজ্ঞেস করলে সারথি বললেন, সেই সন্ন্যাসীই যে জীবনের সন্ধানে মৃত্যুকে অতিক্রম করে যায়। স্ত্রী ও সন্তান ঘুমন্ত অবস্থায় তিনি গ্রহ ছেড়ে চলে যান। এখানে বলে রাখি যে, বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থে গৃহত্যাগকে ‘মহাবিনিষ্ক্রমণ’ নাম দেওয়া হয়েছে।

সিদ্ধার্থ থেকে কিভাবে গৌতম বুদ্ধ হলেন!

গৃহ ত্যাগের পর, সিদ্ধার্থ অনোমা নদীর তীরে মাথা মুণ্ডন করেন এবং ভিক্ষুদের কাশয় পোশাক পরিধান করেন। এখান থেকে সেখানে তিনি প্রায় ৭ বছর ঘুরে বেড়ান, প্রথমে বৈশালীর কাছে আলার কালাম নামে এক সন্ন্যাসীর আশ্রমে আসেন। এর পরে তিনি বোধগয়া চলে গেলেন যেখানে তিনি কৌদিন্য প্রভৃতি পাঁচজন সন্ধানীকে পেয়েছিলেন।

৬ বছরের কঠোর তপস্যা এবং পরিশ্রমের পর, ৩৫ বছর বয়সে সিদ্ধার্থ নিরঞ্জনা বা পুনপুন নদীর তীরে ৩৫ বছর বয়সী একটি বট গাছের নীচে বোধিপ্রাপ্ত হন। এই দিন থেকে তিনি তথাগত হন। বুদ্ধত্ব লাভের পর গৌতম বুদ্ধ নামে প্রসিদ্ধ হন।
উরুবেলা থেকে গৌতম বুদ্ধ সারনাথে এসেছিলেন যেখানে তিনি পাঁচজন ব্রাহ্মণ সন্ন্যাসীর কাছে তাঁর প্রথম ধর্মোপদেশ দিয়েছিলেন। যা বৌদ্ধ গ্রন্থে ‘ধর্মচক্র পরিবর্তন’ নামে পরিচিত। এখান থেকে প্রথমবারের মতো বৌদ্ধ সংঘে প্রবেশ শুরু হয়। তাপসু ও ভল্লিকা নামের শূদ্ররা প্রথমে মহাত্মা বুদ্ধের অনুসারী হয়েছিলেন। মহাত্মা বুদ্ধ তাঁর জীবনের প্রথম ধর্মোপদেশ দেন কোশল দেশের রাজধানী শ্রাবস্তীতে। তিনি মগধকে নিজের প্রচারকেন্দ্রে পরিণত করেন।

বৌদ্ধ ধর্মের শিক্ষা ও নীতি

বৌদ্ধ ধর্মের তিনটি রত্ন হল বুদ্ধ, ধম্ম এবং সংঘ। বৌদ্ধ ধর্মের চারজন আচার্য আছেন।
১) দুঃখ
২) শোক সম্প্রদায়
৩) দুঃখ প্রতিরোধ
৪) দুঃখ নিরোধ গামিনী প্রতিপদ অর্থ অষ্টমুখী পথ।
এছাড়াও, অষ্টমুখী পথের আটটি অঙ্গ রয়েছে, যা দুঃখকে পরাজিত করে এবং তৃষ্ণাকে ধ্বংস করে। অষ্টমুখী পথের তিনটি প্রধান অংশ রয়েছে। প্রজ্ঞা, জ্ঞান এবং সমাধি। এই তিনটি প্রধান অংশের অধীনে যে আটটি পদক্ষেপের প্রস্তাব করা হয়েছে তা নিম্নরূপ:

সাম্যক জ্ঞান
সাম্যক দৃষ্টি: বস্তুর প্রকৃত প্রকৃতির ধ্যান
সম্যক সংকল্প: বিশ্বাসী, বিদ্বেষ ও হিংসা থেকে দূরে থাক
সম্যক বাণী: সব সময় অপ্রীতিকর শব্দ এড়িয়ে চলা
সম্যক কর্মান্ত: দান, দয়া, সত্য, অহিংসা ইত্যাদি ভালো কাজের অনুসরণ করা।
সাম্যক আজিব: পুণ্যের নিয়ম মেনে জীবিকা নির্বাহ করা
সঠিক অনুশীলন: নৈতিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য অবিরাম প্রচেষ্টা করা
সম্যক স্মৃতি: নিজের সম্পর্কে সকল প্রকার ভ্রান্ত বিশ্বাস পরিত্যাগ করা
সাম্য

গৌতম বুদ্ধের পঞ্চশীল নীতি

বৌদ্ধ ধর্মের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নৈতিকতা হিসাবে বুদ্ধের দেওয়া পঞ্চশীল নীতি বা ৫ টি উপদেশ চিরন্তন প্রাসঙ্গিক। কথিত আছে, এই পঞ্চশীল তত্ত্ব মেনে চললে জীবনের দুঃখ- দুর্দশা অনেকটা কাটিয়ে তোলা সম্ভব।

১. জীবমাত্র হিংসা থেকে বিরত থাকা।

২. চুরি করা থেকে বিরত থাকা।

৩. ব্যাভিচারী না হওয়া বা যৌন অসদাচরণ থেকে বিরত থাকা।

৪. মিথ্যা না বলা

৫. মাদক দ্রব্য সেবন না করা

* বৌদ্ধ শিক্ষা অনুসারে, অষ্টাঙ্গিক মার্গ হল (Gautam Buddha’s Ashtang Marga)

১. সম্যক দৃষ্টি
২. সম্যক সঙ্কল্প
৩. সম্যক বাক্য
৪. সম্যক কর্ম
৫. সম্যক জীবিকা
৬. সম্যক প্রযত্ন
৭. সম্যক স্মৃতি
৮. সম্যক।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :