April 26, 2024, 5:38 pm

সংকট সঙ্গে নিয়ে শুরু ২০২৩

উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আর অনিশ্চয়তার মধ্যে আরও একটি বছর শেষ হয়ে গেল। দুই বছরের করোনা মহামারির ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় নিয়ে শুরু হয়েছিল ২০২২ সাল। কিন্তু বছরের এক মাস যেতে না যেতেই শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে হামলার পর পাল্টে যায় বিশ্ব পেক্ষাপট। বিশ্ব অর্থনীতিতে নেমে আসে কালোমেঘ। ওলটপালট করে দেয় সব হিসাব-নিকাশ। তছনছ হয়ে যায় সব কিছু।

জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্যসহ সব ধরনের জিনিসের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় দেশে দেশে চড়তে থাকে মূল্যস্ফীতি। পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটতে থাকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর অর্থনীতির দেশ আমেরিকান মুদ্রা ডলারের দর। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফের তথ্যে ২০২২ সালে বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মাত্র ২ শতাংশে নেমে আসবে।

এই অস্থিরতার ছোবল বাংলাদেশেও লেগেছিল; বেশ ভালোভাবেই লেগেছিল। এখনও প্রতি মুহূর্তে তার মাশুল গুনতে হচ্ছে। মহামারির ক্ষতি কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে নতুন উদ্যমে যে বছর শুরু করেছিল সরকার, সেটা তো সম্ভব হয়নি; উল্টো সেই জঞ্জাল আর সংকট সঙ্গে নিয়েই শুরু করতে হলো নতুন বছর ২০২৩ সাল।

বিদায়ী বছরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বড় ধাক্কা লেগেছে দেশের অর্থনীতিতে। আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় দেখা দেয় ডলারের চরম সংকট। আবার আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে দেশের বাজারেও। সরকারের নীতিনির্ধারকদের মাথাব্যথার বড় কারণ হয়ে ওঠে মূল্যস্ফীতি। আগামী বছরেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ। তবে এ বছরের নানা সংকটের মধ্যেও উচ্ছ্বাস ছড়ায় স্বপ্নের পদ্মা সেতু ও বহুল প্রতীক্ষিত মেট্রোরেল। বছরটিতে অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে সুসংবাদ যেমন ছিল, তেমনি ছিল নেতিবাচক খবরও। বছরের শেষ দিকে এসে কয়েকটি ইসলামী ব্যাংকে আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা ব্যাংকিং খাতে চরম দুরবস্থার চিত্র ফুটে ওঠে, যা সরকারকে বেশ বেকায়দায় ফেলে দেয়।

একটি ঝামেলাপূর্ণ বছরের শেষে বাংলাদেশকে ২০২৩ সালের নতুন সূর্যকে স্বাগত জানাতে হচ্ছে নানা চ্যালেঞ্জকে সামনে নিয়ে। এই চ্যালেঞ্জকে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন বলে অভিহিত করছেন দীর্ঘদিন আইএমএফের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করে আসা অর্থনীতির গবেষক আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ যদি এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়াতে পারে, তাহলে আর পেছন ফিরে তাকাতে হবে না। ২০৪১ সালের স্বপ্ন, উন্নত সমৃদ্ধিশালী দেশের পথে অগ্রসর হবে বাংলাদেশ।’

আশার কথা হচ্ছে, বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কার মতো ভাগ্য বরণ করতে হয়নি। অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ফুরিয়ে যাওয়ায় দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্রটি গভীর সংকটে পড়ে। পাকিস্তানের প্রায় একই অবস্থা এখন। কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনও শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। সবচেয়ে আলোচনা হচ্ছে অর্থনীতির যে সূচক নিয়ে, সেই বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ এখন ৩৪ বিলিয়ন ডলারের ওপরে অবস্থান করছে। পাকিস্তানের রিজার্ভ এখন ৫ বিলিয়ন ডলার; শ্রীলঙ্কার রিজার্ভ এখন কত কেউ হিসাবে রাখে না।

সরকারের নীতিনির্ধারকদের একজন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘স্বীকার করছি যে, আমাদের অর্থনীতি চাপের মধ্যে আছে। তবে এটা জোর দিয়ে বলছি যে, অনেক দেশের চেয়ে ভালো আছি আমরা। নাই নাই করেও আমাদের রিজার্ভ এখনও ৩৪ বিলিয়ন ডলার। এই রিজার্ভ দিয়ে ছয় মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। আমাদের রপ্তানি আয় বাড়ছে; রেমিট্যান্স বাড়ছে; আমদানি কমেছে। রিজার্ভ আবার আগের অবস্থায় ফিরে যাবে বলে আমি আশা করছি। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি কমতে শুরু করেছে। আমনের ভালো ফলন হয়েছে। সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ২০২৩ সালে আমরা ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়াব।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :