মোঃ মতিউর রহমান, পাঁচবিবি (জয়পুরহাট) প্রতিনিধিঃ
জীবন সংগ্রামে পরাজিত জয়পুরহাটরে পাঁচবিবি উপজেলার বালিঘাটা
ইউনিয়নের দেবখন্ডা গ্রামের এমারত। ক্রাচে ভর দিয়ে সারা দিনে ভিক্ষা করে যা
রোজগার করনে তা দিয়েই কোন রকমে সংসারের ঘানি টেনে আসছে স্ত্রী ও
অসুস্থ পুত্রকে নিয়ে । এমারতের আকুতি সবার সাহায্য সহযোগীতা পেলে আবার
সে সুস্থ হয়ে উঠবে। সুস্থ্য হবে তার বিছানাগত পুত্র কায়ুম হোসেন (১৭)। স্ত্রী
পুনরায় ফিরে পাবে একটি সুস্থ পরিবার। চোখ ভরা জল নিয়ে এই দুঃখ কষ্টের কথাগুলো
বলছিল এ প্রতিবেদককে কিছুক্ষণের জন্য কাছে পেয়ে।
বর্তমানে স্ত্রী ১ পুত্র নিয়ে এমারতের ছোট্ট একটি সংসার। এক সময় আনন্দ-হাসি
নিয়েই বেশ চলছিল সংসার জীবন। এমারত পূর্বে ঢাকায় রিকশা চালাত। এতে যে
আয় হত তাতেই স্ত্রী পুত্র, কন্যা নিয়ে বেশ স্বাচ্ছন্দেই সংসার চলে আসছিল তার।
সেই উপার্জন দিয়েই সংসারের সবার মুখে হাসি ফুটিয়েছেন। বিয়ে দিয়েছেন
মেয়েকে। ১৭ বছর আগে এক পুত্র সন্তান প্রতিবন্ধি হয়ে জন্ম নেয়। মা-বাবা তার
সন্তানকে সুস্থ্য করতে কয়েক লাখ টাকা খরচ করেও বাচাঁতে পারেনি তাকে ।
বর্তমানে দ্বিতীয় পুত্র আব্দুল আইয়ুম জন্মের পর ভালই ছিল। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম
পরিহাস এক সময় কাইয়ুমের মৃগীরোগ ধরা পরে। আর এ থেকেই এক সময় সে
প্যারালাইজ্ড হয়ে এখন বিছানাই তার একমাত্র সম্বল । তাকে চিকিৎসা করতে
প্রচুর অর্থ খরচ হচ্ছে। এখনও ভিক্ষা আর মানুষের সাহায্যে অব্যাহত রেখেছেন তার
চিকিৎসা।
এদিকে এমারত আলী ৬ বছর আগে তার অসাবধানতা বশত পায়ের তালুতে লোহার
কাটা বিধে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করেন। এতে কোনো লাভ হয়নি,
পাটি হাটু পর্যন্ত অবেশ হয়ে পড়েছে। পা ভাল করতে দরকার উন্নত চিকিৎসার। কিন্তু
সহায়-সম্বলহীন এমারত আলী অবশ পা নিয়েই ক্রাচে ভর দিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে
ভিক্ষাবৃত্তি আর সাহায্য চেয়ে এত টাকা জোগানো তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে দেখা
দিয়েছে।
পূর্বে বড় সন্তানের চিকিৎসা পরে ছোট ছেলের চিকিৎসা এবং এখন নিজের
পায়ের চিকিৎসা করতে গিয়ে শ্বশুর বাড়ির যেটুকু জমির ভাগ পেয়েছিলেন
সেটুকু বিক্রি করেছেন,। নিজের ৫ কাঠা জমি ছিল তাও বিক্রি করেছেন। সম্বল
বলতে এখন ৬ শতাংশ বাড়ি ভিটা ছাড়া আর কিছুই নেই। অচল পা নিয়েই সন্তান ও
নিজের ঔষধের টাকা এবং সংসারের দুমোঠো ভাতের টাকা জোগাড় করতে এমারত ক্র্যাচে ভর দিয়ে পাড়া মহল্লা-হাট বাজাড়ে ভিক্ষা করে কোনো রকমে সংসারটিকে
টিকিয়ে রাখলেও বর্তমানে পায়ের যন্ত্রনা বৃদ্ধি পাওয়ায় ভিক্ষা বৃত্তিতেও যেতে
পারছেন না।
এমতঅবস্থায়, তার আকুল আকুতি কোনো সহদয় ও দানশীল ব্যত্তি যদি একটু এই
পরিবারটির দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন তাহলে নিজের চিকিৎসা, তার
সন্তানের চিকিৎসার ব্যয়ভার মিটানো যেতো। সুস্থ্য হতো এমারত আলী , ফিরে
পেতো সে পরিশ্রম করার সুযোগ। তার উপার্জিত টাকা দিয়েই সন্তানের
চিকিৎসার ব্যয়ভার ও সংসার চালাতে কিছুটা সহযোগীতা পেতো।
Leave a Reply