আজ ১৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৪ঠা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আমি কাল নাও থাকতে পারি..মৃত্যুর আগেই কি আঁচ পেয়েছিলেন ইন্দিরা?

কলকাতা সংবাদদাতা।। মৃত্যুর আগের দিনের ভাষণে ইন্দিরা গান্ধী যেন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি আততায়ীর গুলিতে নিহত হবেন। কাকতালীয় হলেও মৃত্যুর আগের দিনের দেওয়া তার ভাষণে তেমনই লক্ষণ দেখা গিয়েছিল। ১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তার দুই দেহরক্ষী সৎবন্ত সিং এবং বিয়ন্ত সিং এর গুলিতে নিহত হন।
ওই দিন সকালে আইরিশ টেলিভিশনের জন্য নির্মীয়মান একটি তথ্যচিত্রের প্রয়োজনে ব্রিটিশ অভিনেতা পিটার উস্তিনভকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার কথা ছিল প্রিয়দর্শিনীর। ১ নং সফদরজঙ্গ রোডে অবস্থিত প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের বাগান ধরে হেঁটে যাচ্ছিলেন জওহরলাল কন্যা। সৎবন্ত ও বিয়ন্ত সিংহের দ্বারা রক্ষিত একটি ছোটো দরজার ভিতর দিয়ে যাওয়ার সময় তারা সরাসরি ইন্দিরা গান্ধীকে গুলি করে।

বিয়ন্ত সিংহ ধার থেকে তিন রাউন্ড এবং সৎবন্ত সিংহ নিজের স্টেনগান থেকে ত্রিশ রাউন্ড গুলি ছোঁড়ে। অন্যান্য দেহরক্ষীরা বিয়ন্তকে ঘটনাস্থলেই গুলি করে হত্যা করে এবং সৎবন্তকে গ্রেফতার করে। গুলিচালনার অব্যবহিত পরেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। অস্ত্রোপচার করে তার শরীরের উনিশটি বুলেটের সাতটি বের করে নেওয়া হয়। কিন্তু গুলিচালনার এক ঘণ্টার মধ্যেই তার মৃত্যু হয়।
এরপর ৩ নভেম্বর গান্ধীজীর সমাধিস্থল রাজঘাটের কাছে শক্তিস্থলে ইন্দ্রাগান্ধীর দেহ সৎকার করা হয়েছিল। তবে তাকে হত্যার ঠিক আগের দিন ৩০শে অক্টোবর জীবনের শেষ ভাষণটা দিয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী ভুবনেশ্বরে। অন্যান্য ভাষণের মতোই ওই দিনের ভাষণটিও লিখে দিয়েছিলেন তাঁর মিডিয়া উপদেষ্টা এইচ ওয়াই শারদা প্রসাদ।কিন্তু ভাষণ দিতে দিতে হঠাৎই তিনি লিখিত বয়ান থেকে সরে গিয়ে নিজের মতো কিছু বলতে শুরু করেন। ওই সময় তাঁর বলার ধরনও পাল্টে গিয়েছিল ।
তখন লিখিত কাগজ থেকে চোখ সরিয়ে নিজে থেকেই বলতে শুরু করেন, “আমি আজ এখানে রয়েছি। কিন্তু কাল নাও থাকতে পারি। সেটা নিয়ে ভাবি না যে আমি থাকলাম কী না। অনেকদিন বেঁচেছি। আমি গর্বিত আমি আমার পুরো জীবনটাই দেশের মানুষের সেবার কাজে লাগাতে পেরেছি বলে।
আর আমি শেষ নিশ্বাসটা নেওয়া পর্যন্ত সেটাই করে যাব । আর যেদিন মরে যাব, সেদিন আমার রক্তের প্রতিটা বিন্দু ভারতকে আরও মজবুত করার কাজে লাগবে।”

নিশ্চিত করে জানা নেই তিনি সত্যিই হত্যার ব্যাপারে কিছু আঁচ পেয়েছিলেন কিনা। তবে কাকতালীয় হলেও মৃত্যুর আগের দিনের ভাষণে বলা কিছু কথার আলাদা তাৎপর্য রয়েছে। যা দেখে মনে হতেই পারে শব্দের মাধ্যমেই নিয়তি ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দেয়।
ভাষণ শেষে যখন ইন্দিরা গান্ধী সেখানকার রাজভবনে যান তখন সেখানে ওড়িশার তৎকালীন রাজ্যপাল বিশ্বম্ভরনাথ পান্ডে তাকে বলেছিলেন, ” এমনভাবেএকটা রক্তাক্ত মৃত্যুর কথা বলে আপনি আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছেন।” জবাবে ইন্দিরা গান্ধী জানান, তিনি যা বলেছেন তা তার নিজের মনের কথা। তারপর ওই দিন রাতেই দিল্লি ফিরেছিলেন ইন্দিরা।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :