April 27, 2024, 12:26 am

বিএনপি নেতা শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন আর নেই

অনলাইন ডেস্ক।। এ সময়ে বাংলাদেশের সেরা ক্রিকেটার কে? এক মুহূর্তও ভাবতে হবে না। নাম চলে আসবে সাকিব আল হাসানের। আবার যদি জানতে চাওয়া হয়, এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন কোন ক্রিকেটার? দুঃখজনক হলেও নাম আসবে সাকিব আল হাসানের। ১৬ বছর ধরে ক্রিকেট খেলছেন তিনি। বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না তাঁর। একাধিকবার সতীর্থ ক্রিকেটার ও দর্শকদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করে তিরস্কৃৃত হয়েছেন; শাস্তি পেয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নিয়ম লঙ্ঘন করে। একবার জুয়াড়ির প্রস্তাব গোপন করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল-আইসিসির নিষেধাজ্ঞায় পড়ে এক বছর মাঠের বাইরেও ছিলেন তিনি। কিছুদিন আগে সবাইকে অবাক করে দিয়ে যুক্ত হয়েছিলেন অনলাইন জুয়া ও ক্যাসিনোর পোর্টাল বেটউইনার নিউজের সঙ্গে তাদের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে; যদিও বিসিবির কড়া অবস্থানের কারণে তাঁকে শেষ পর্যন্ত ওই পোর্টালের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হয়। সম্প্রতি আবারও সাকিব এক বিতর্কে জড়িয়েছেন। আর তা হলো শেয়ার কারসাজির ঘটনা। বুধবার সমকালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর ডিএসই-ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ সাতটি কোম্পানির শেয়ার কারসাজির ঘটনার তদন্ত করেছে। এগুলোর মধ্যে চারটি ঘটনায় জড়িত ছিল সাকিবের মালিকানাধীন ব্রোকারেজ হাউস মোনার্ক হোল্ডিংস।
প্রতিবেদনমতে, যৌথ মালিকানাধীন মোনার্ক হোল্ডিংসের আরেকজন মালিক হলেন সাম্প্রতিক সময়ে শেয়ার কারসাজির জন্য সবচেয়ে বেশি আলোচিত সরকারি কর্মকর্তা আবুল খায়ের হিরোর স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান। কয়েক কোটি টাকা এ কোম্পানির মাধ্যমে লগ্নি করা ছাড়া এ ব্যবসায় সাকিবের আর কোনো সংশ্নিষ্টতা নেই। শেয়ার কেনাবেচার কাজটা করে থাকেন মূলত হিরো সাহেব। সম্ভবত এ কারণেই পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিও সাকিবকে ছাড় দিয়ে ওই কারসাজির জন্য হিরোর স্ত্রীসসহ অন্যদের কোটি টাকা জরিমানা করেছে। তবে আমরা মনে করি, সাকিব জেনেশুনেই ওই বিতর্কিত শেয়ার ব্যবসায়ীর সঙ্গে মিলে কোম্পানি খুলেছেন এবং কারসাজির মাধ্যমে ওই কোম্পানি যে মুনাফা অর্জন করেছে; সাকিবও তার ভাগীদার। অতএব ওই শেয়ার কারসাজির দায় তিনি এড়াতে পারেন না। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সাকিব শুধু এ সময়েরই দেশসেরা ক্রিকেটার নন; আমাদের গোটা ক্রিকেট ইতিহাসেই তাঁর স্থান হবে সবার ওপরে। তা ছাড়া যদি বলা হয়, সারাবিশ্বের মানুষের কাছে সাকিব হলেন বাংলাদেশের পোস্টার বয়- তাহলেও ভুল বলা হবে না। এসব কারণে তিনি শুধু বাংলাদেশের তরুণ সমাজ নয়; গোটা বিশ্বের তরুণদের কাছে এক ধরনের আইকন হিসেবে পরিচিত। আমরা জানি, মানুষ তাঁকেই আইকন হিসেবে মানে, যাঁকে তাঁরা শুধু শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার আসনেই বসায় না; তাঁর জীবনযাপন পদ্ধতি থেকে শুরু করে প্রতিটি পদক্ষেপ তারা অনেকাংশে অন্ধভাবে অনুসরণ করে। ফলে
সাকিবের মতো একজন আইকন যখন একের পর এক বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন, তখন শুধু তাঁর নিজের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয় না; দেশের ভাবমূর্তিও সংকটে পড়ে। শুধু তাই নয়। এর ফলে সবচেয়ে বড় যে ক্ষতিটা হয়, তা হলো নতুন প্রজন্মের কাছে তা এক ধরনের ভুল বার্তা দেয়। বিশেষ করে ভালো-মন্দের পার্থক্য বোঝার ক্ষেত্রে এবং জীবনে বড় কিছু হওয়ার জন্য নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলার বিষয়ে।
এটা ঠিক, আমাদের রাষ্ট্রের প্রায় সব পর্যায়ে এবং সমাজের প্রায় সবখানে বহুদিন ধরে অনিয়ম আর বিশৃঙ্খলার যে দৌরাত্ম্য চলছে; সাকিবের নানা বিতর্কে জড়িয়ে পড়াটা একদিক দিয়ে তা থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। বিসিবির যেসব কর্মকর্তার সাকিবের মতো খেলোয়াড়দের গাইড করার কথা; তাঁদের অনেকেই বিভিন্ন সময়ে নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। আর্থিক কেলেঙ্কারিসহ নানা অপরাধ সংঘটনের পরও রাষ্ট্র ও সমাজে অনেকেরই তবিয়ত বহাল আছে। এসব বিষয় সাকিবের মতো তরুণদের ভুল পথে হাঁটতে প্ররোচিত করার জন্য যথেষ্ট। তবে অনেকেই বিপথে গেছে বলে সাকিবের বেপথু হওয়াটা মেনে নিতে হবে- তারও কোনো যুক্তি নেই। তাই শুধু ক্রিকেট নয়; দেশ ও জাতির স্বার্থেই সাকিবকে বিতর্কিত পথে হাঁটা বন্ধ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে শুধু বিসিবি নয়; প্রয়োজনে রাষ্ট্রকেও দায়িত্ব নিতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :