April 26, 2024, 10:25 pm

কুকুরের মাংস সন্দেহে হোটেল মালিক আটক

সুচিত্রা রায়:

সাভারের আশুলিয়ায় একটি হোটেলে কাচ্ছি বিরিয়ারি খাবারের মাংস নিয়ে সন্দেহ হলে ভুক্তভোগীর অভিযোগ ছাড়াই এক হোটেল মালিক আটক করেছে পুলিশ। তবে পুলিশ বলছেন, উৎসকের মানুষে ক্ষোভের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হোটেল মালিককে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়। পরে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।

সোমবার দুপুরে সন্দেহভাজন ব্যক্তি রাজীবকে আশুলিয়া থানা থেকে আদালতে পাঠানো হয়। এরআগে রবিবার (১৫ মে) রাত ১২ টার দিকে আশুলিয়ার নরসিংহপুর বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন আল্লাহর দান বিরিয়ানি হাউজ-৫ নামের দোকান থেকে তাকে আটক করা হয়। গ্রেফতার রাজীব বরিশাল জেলার মুলাদি থানার নুনচর গ্রামের চুন্ন হাওলাদারের ছেলে।

ক্রেতা রুপালী বেগম বলেন, গতকাল দুপুরে ছেলের জন্য এই দোকান থেকে কাচ্ছি বিরিয়ানি কিনে বাসায় নেই। বিরিয়ানি ভালো না বলে খেতে পারছিলো না। এরপর দেখি মাংসের হাড় খুব চিকন। আমার সন্দেহ হয়। এটা গরু মাংস কিনা? পরে তাদের দোকানে যাই। শুধু জানতে চেয়েছি এটা কি গরু নাকি ঘাসির মাংস । তারা বলে আমরা গরুর মাংস দিয়ে বিরিয়ানি রান্না করি। এর চলে আসি। এর পরে স্থানীয় ওষুধের দোকানদার শরীফ ভাইয়ের কাছে বলেছিলাম। তিনি দেখে বলেন, আমি তো বলতে পারছি না।
অপরজন আলমগীর হোসেন বলেন, তেহরী খাওয়ার সময় দেখি হাড় চিকন ও মাংস দেখতে অনেকটা কালো। তারা বলেন, বেশি রান্না করা হয়েছে বলে মাংস একটু কালো হয়েছে। পরে আমি না খেয়ে দাম দিয়ে চলে যাই।

আল্লাহর দান বিরিয়ানি হাউজ দোকানের একটি শাখার মালিক সায়েদ হোসেন বিল্লাল বলেন, কিছু মানুষ চক্রকান্ত করে আমাদের ফাঁসিয়েছে। শাখা-৫ দোকানটি এক বছর হলো। এখানে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা বিক্রি হয়। আমাদের আশুলিয়ায় ৭ টি শাখা। এমনকি আমরা ভারতের কোন এলসি মাংসও আনি না। কাঠগড়া বাজারে আলিম কসাই থেকে গরুর মাংস কিনি। কোনদিন কোন ধরনের অভিযোগ পাইনি। আমরা বলেছি ল্যাবে পরীক্ষা করে যদি অন্য কিছু পাওয়া যায়। যে শাস্তি দিবেন , আমরা তাই মাথা পেতে নিবো। কিন্তু কিছু উৎসক মানুষ ও স্থানীয় কিছু সাংবাদিক এই কাজ করেছে। অনেক অনুরোধ করেছি। মিটমাটের জন্য টাকা দাবী করে তারা। না দিলে তারা পুলিশ এনে দোকানের মালিক রাজীবকে আটক করতে বাধ্য করে।

রুপালি বেগম আরো বলেন, আমি কোথাও কোন অভিযোগ করেনি। কোথাও এটাও বলেনি কুকুর মাংস কিনা বা কুকুরের মাংস নিয়ে সন্দেহও করেনি। আমি তো বলেছি এটি গরু বা ঘাসির মাংস কিনা। যদি হয় তাহলে মাংসের হাড় কি এতো চিকন হয়? তদন্ত না করে পুলিশের হাতের তাকে এভাবে তুলে দেয়া ঠিক হয়নি। পুলিশকে আপনি বলেনি এই বিষয়ে? পুলিশ তো আমার সাথে কোন কথা বলেনি। উল্টো ওষুধের দোকানি শরীফ ভাইকে বলেছিলাম, ভাই এটা নিয়ে বেশি ঝামেলা যাতে না হয়।
কাঠগড়া বাজারে আলিম কসাই, প্রায় বছর ১২ বছর ধরে তাদের কাছে মাংস বিক্রি। এখন প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৫০ কেজি গরু মাংস কিনে। একদিন মিস গেলে দুই দিনের মাংষ একদিনে নিয়ে যায়। ফ্রিজে রাখে। শুক্রবার (১৩ মে) দেশী ছোট গরুর জবাই করেছিলাম। সেই মাংস নিয়েছে তারা। সেখানে হাড় চিকন হতে পারে। গরু জবাইয়ের ক্ষেত্রে আমাদের বাজার কমিটি প্রতিদিন যাছাই বাছাই করে এখানে। অন্য কিছু করার কোন সুযোগ নেই।
ওষুধ দোকানি শরীফুল বলেন, রুপালী বেগম এসেছিলেন। মাংস নিয়ে সন্দেহ করে সেগুলো পরীক্ষা নিরীক্ষা কিভাবে করা যায় আমার কাছে জানতে চেয়েছিলেন। বলেছি আমার জানা নেই। তখন দোকানে আরও দুই তিনজন লোক ছিলো। তারা শুনেছেন।

সাভার উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. সাজেদুল ইসলাম বলেন, আশুলিয়া থানার এক কর্মকর্তা মাংস পরীক্ষার জন্য যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু এখনো আলামত হতে পাইনি। আমাদের এখানে সম্ভব না হলে প্রয়োজনে ঢাকায় ল্যাবে পরীক্ষার জন্য পাঠাবো।

এব্যাপারে আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুব্রত রায় বলেন, প্রাথমিকভাবে ঘটনাস্থল থেকে অভিযুক্তকে আটক করে থানায় আনা হয়েছে। আমালত হিসেবে মাংস জব্দ করে পরীক্ষা উপেজলা ভেটেরিনারি সার্জনের কাছে পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষার পর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে। কোন অভিযোগকারী না থাকায় আমি বাদী হয়ে মামলা দিয়ে আটক রাজীবকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। যেহেতু বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নই। তাই পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে পরবর্তীতে মামলা ও আইনগত প্রক্রিয়া নেয়া হবে। যদি পরীক্ষা গরু মাংস হয়ে থাকে তাহলে আসামী অব্যাহতি পাবেন। তারা চাইলে ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করার সুযোগ আছে।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :