যশোরে শীত নিবারণের চেষ্টা শুরু হয়েছে। নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ শীতবস্ত্র সংগ্রহ করতে ফুটপাতে ব্যাপক কসরত করছে। যেন ফুটপাতই তাদের একমাত্র ভরসা। গত কয়েকদিন ধরে যশোর শহরের মুজিব সড়কে ব্যাপক সংখ্যক মানুষ ভিড় করছে গরম কাপড় কেনার জন্য। সোমবার ছিল উপচেপড়া ভিড়। দেখে মনে হয়, কোনো উৎসবে যোগ দিতে এসেছে বিভিন্ন বয়সী মানুষ!
গত কয়েকদিন ধরে যশোরে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। শীত বৃদ্ধির সাথে সাথে মার্কেট ও ফুটপাতে শীতবস্ত্র কেনার ধুম পড়েছে। উচ্চ ও মধ্যবিত্তরা বড় বড় বিপণী বিতানে ছুটলেও নিম্নবিত্তদের একমাত্র ঠিকানা ফুটপাত। এসব ফুটপাতে ইতিমধ্যে শীতের কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। পরিবার পরিজন নিয়ে শীতের কাপড় কিনতে ছুটছেন বিভিন্ন বয়সীরা। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, প্রতি মৌসুমে যশোরে কোটি টাকার শীতবস্ত্র বেচাকেনা হয়। কিন্তু গত কয়েক মৌসুমে সেইভাবে শীত না আসায় ব্যবসায়ীদের অনেক শীতবস্ত্র অবিক্রিত থেকে যাচ্ছে। তবে, এ বছরই এর ব্যতিক্রম হয়েছে।
সোমবার দুপুর ও সন্ধ্যায় যশোর শহরের মুজিব সড়কে দেখা যায়, ফুটপাতে নানা ধরনের শীতবস্ত্র নিয়ে বসেছেন শতাধিক ব্যবসায়ী। ভ্রাম্যমাণ ভ্যানগাড়িতেও বিক্রি হচ্ছে শীতের নানা ধরনের পোশাক। প্রচন্ড শীতে একটু বেশি উষ্ণতা পাওয়ার আশায় এসব পোশাক কিনছেন ক্রেতারা। খুটিয়ে খুটিয়ে শীতবস্ত্র দেখছেন তারা। পছন্দ এবং দরদামে মিললে সেটি নিয়ে বাড়ি ফিরছেন অনেকেই।
এমনই একজন ক্রেতা আব্দুল হালিম। তিনি বলেন, ‘গার্মেন্টস কারখানা থেকে প্রচুর পরিমাণে জ্যাকেট-সুয়েটার আসে স্থানীয় বাজারে। এর বাইরে কোরিয়া-তাইওয়ান থেকে শীতের পুরানো কাপড়ও আসে। এসব কাপড় ভ্যানগাড়িতে কম মূল্যে পাওয়া যায়। তাই এখানে কিনতে এসেছি।’ মুজিব সড়কে শীতবস্ত্র কিনতে আসা হাবিবা সুলতানা নামের এক নারী বলেন, ‘সন্তানদের জন্য শীতের কাপড় কিনতে এসেছি। ফুটপাতে যে এতো ভালো কালেকশন থাকে, আগে জানতাম না।’
মুজিব সড়ক ছাড়াও কালেক্টরেট ও জেলা পরিষদ মার্কেটে ক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি।
জেলা পরিষদ মার্কেটের মনির গার্মেন্টেসের বিক্রয় কর্মী নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘বর্তমানে যেসব শীতবস্ত্র বিক্রি হচ্ছে তার মধ্যে হাত মোজা, পা মোজা, হুডি, সুয়েটার, গেঞ্জি উল্লেখযোগ্য। তবে, বড় বড় দোকানে কমবেশি জ্যাকেটও বিক্রি হচ্ছে।’ বিক্রি বৃদ্ধি পাওয়ায় দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে নিজাম বলেন, ‘বেশকিছু দিন বিক্রি ছিল খুবই কম। শীতের সিজন শেষ হতে যাচ্ছে। যার যা কেনা আছে তা চলতি মাসের মধ্যে বিক্রি করতে হবে। কারণ এই মাস পর শীত কমে যাবে। তখন আর শীতবস্ত্র বিক্রি হবে না। ফলে, লোকসানের মুখে পড়তে হবে ব্যবসায়ীদের। এ কারণে বেশিরভাগ ব্যবসায়ী দাম না বাড়িয়ে মজুত রাখা কাপড়চোপড় বিক্রি করে দিচ্ছেন।’
এদিকে, এখনো যশোরে শীতার্ত মানুষের পাশে শীতবস্ত্র নিয়ে কাউকে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি। ছিন্নমূল মানুষ শীতবস্ত্র পাওয়ার বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করছেন। কিন্তু তেমন কোনো সাড়া পাচ্ছেন না। শীতার্তরা তাদের পাশে দাঁড়াতে বিত্তবানদের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
Leave a Reply