April 16, 2024, 6:54 pm

‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ স্লোগানে বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালির আত্মপরিচয় ও স্বকীয়তাবোধের জাগ্রত চেতনা থেকে উৎসারিত একটি দিন

বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালির আত্মপরিচয় ও স্বকীয়তাবোধের জাগ্রত চেতনা থেকে উৎসারিত একটি দিন। এই দিনে মাতৃভাষা বাংলার সম্মান রক্ষার তাগিদে বুকের তাজা রক্তে রাজপথ রঞ্জিত করেছিলেন বাংলার দামাল তরুণরা। ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ স্লোগান দিতে দিতে তাঁরা ঘাতকের বুলেটের সামনে বুক পেতে দিয়েছিলেন। সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ নাম-না-জানা অনেক শহীদ বুকের রক্তে রঞ্জিত করেছিলেন ঢাকার রাজপথ। তাঁরা বিদেশি শাসকদের বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, বাংলা ও বাঙালি এক অবিচ্ছিন্ন সত্তা। এই শক্তিকে অস্বীকার করার শক্তি কারো নেই। অমর সেই শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বাঙালিরা আজ ছুটে যাবে শহীদ মিনারে। পুষ্পে পুষ্পে ভরে যাবে শহীদ মিনার। ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাখো মানুষের ঢল নামবে। শহীদ মিনার রূপ নেবে স্মৃতির মিনারে। আজ সেই মহান শহীদ দিবস, শুধু আমরা নই, সারা বিশ্বই পালন করবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। স্মরণ করবে, শ্রদ্ধা জানাবে বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি। আমরা শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করি ভাষা আন্দোলনের জানা-অজানা সব শহীদকে।
তাই একুশে ফেব্রুয়ারির যে চেতনা আমাদের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙতে সাহায্য করেছে, সেই দিনটিকে শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, বুকে ধারণ করতে হবে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে আত্মনিবেদনের এই দিনটি আমাদের প্রেরণা হয়ে থাকবে। মাতৃভাষা ছাড়া জ্ঞানচর্চাও পূর্ণাঙ্গতা পায় না। দুঃখজনক হলেও সত্য, মাতৃভাষার চর্চা ও বিকাশের ক্ষেত্রে আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে আছি। আদেশ-নির্দেশ দিয়ে সেটি করা সম্ভব নয়। এ জন্য প্রত্যেকের ব্যক্তিগত উপলব্ধি শাণিত করতে হবে। পরিভাষা, অভিধানসহ সম্ভাব্য সব উপকরণ সহজলভ্য করার মাধ্যমে ভাষাচর্চার পরিবেশ তৈরি করতে হবে এবং বিজাতীয় মন-মানসিকতা থেকে বিনা প্রয়োজনে বিদেশি ভাষা ব্যবহারের অপচেষ্টা নিরুৎসাহ করতে হবে। বাঙালি জাতির নিজস্ব ভূখ- আজ স্বাধীন। শিক্ষা, সমাজ, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির নানা শাখা-প্রশাখায় এগিয়ে চলেছে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। আমরা বিশ্বাস করি, এই এগিয়ে চলা অব্যাহত থাকবে এবং বিশ্বসভায় বাঙালি জাতি শিগগিরই গৌরবের আসনে অধিষ্ঠিত হবে।
পৃথিবীতে মাতৃভাষার সম্মান রক্ষার জন্য আত্মাহুতি দেওয়ার ঘটনা বিরল। আমরা সেই বিরল দৃষ্টান্তের অধিকারী। এ জন্য জাতি হিসেবে আমরা গর্বিত। সেই গর্ব, সেই অহংকার নিয়ে বাংলা ও বাঙালির ভাষিক-সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও কৃষ্টি এগিয়ে নেওয়ার সার্বক্ষণিক চেষ্টা আমাদের করে যেতেই হবে। আর তার মাধ্যমেই ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি যথার্থ সম্মান প্রদর্শন করা সম্ভব হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :