April 25, 2024, 5:57 am

রোজার গুরুত্ব, ফজিলত ও আত্মসমর্পণ

রাশিদা য়ে- আশরার,কবি ও সাহিত্য সম্পাদক, দৈনিক পদ্মা সংবাদ।

রোজার গুরুত্ব, ফজিলত ও আত্মসমর্পণ এর মাস। আত্মসমর্পণ বলতে বোঝা যায় নিজেকে, সমস্ত পাপ,অন্যায় হতে মুক্ত রাখা, মানুষের কল্যাণে এগিয়ে আসতে হবে।প্রথমেই নিজে থেকেই শুরু আমি কি করি আমার কর্ম কি? যদি মহান আল্লাহ আমাদের এই পবিত্র রমজান মাসের ফজিলতে মাপ করতে পারেন তবে আমি আমার কর্ম যা আমি করি হয়তো কেনা-বেচার এর মধ্যে মানুষের ক্রয়ের সাধ্যের মধ্যে রাখবো। অতি লাভের জন্য মানুষের ক্রয়ের বাহিরে চলে গেলে তবে আমি কখনো আত্মসমর্পণকারী হতে পারবো না।

মাহে রামাদানের পবিত্রতা ও নিজেকে
“রোজা” শব্দটির আভিধানিক অর্থ ‘সওম’ বা ‘সিয়াম’ এর অর্থ বিরত থাকা। সুবহে সাদেক থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানাহার ও স্বামী- স্ত্রীর মিলন থেকে বিরত থাকার নাম রোজা।
ইহা ইসলামের অন্যতম রুকন বা ভিত্তি। একজন মুসলমানের জন্য নামাজ যেমন অপরিহার্য ঠিক তেমনি ভাবে রমজানের রোজাও ফরজ বা বাধ্যতামূলক।
রোজার গুরুত্ব ও ফজিলতঃ
রোজা কে ফরজ ঘোষণা করে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক বলেন,”তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর যেমন ফরজ করা হয়েছিল, ঠিক তেমনি ভাবে তোমাদের উপরও রোজাকে ফরজ করা হয়েছে।”
বিশ্ব সৃষ্টির সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ মানবজাতির অদ্বিতীয় হেদায়েত গ্রন্থ পবিত্র “আল কোরআন” অবতরণ এই রমজান মাসেই শুরু হয়েছিল বলে এই মাসকে সর্বাধিক মর্যাদাশীল করে দেওয়া হয়েছে।
তেমনি এই পবিত্র গ্রন্থ লাভের আনন্দ উৎসবকে সার্থক ও মহিমা মন্ডিত করার উদ্দেশ্যে উহার বিধানকে মেনে চলার জন্য দিনে রোজা এবং রাতে তেলাওয়াত করার বা শ্রবণ,অধিক পরিমাণে এবাদত বন্দেগী করার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে তারাবিহ নামাজে সম্পূর্ণ কুরআনের খতম কে সুন্নাত ঘোষণা করা হয়েছে।
আল্লাহ পাক এরশাদ করেন,”এইতো সেই মাহে রমজান যখন পবিত্র কুরআনকে সমগ্র মানবজাতির পথপ্রদর্শক রূপে অবতীর্ণ করা হয়েছে।”
সূরা আল বাকারাঃ আয়াত-১৮৫

আল্লাহ পাক আরও এরশাদ করেছেনঃ
“মানুষের প্রতি নেক আমলের জন্য তার আমলনামায় দশ থেকে সাত ‘শ’গুরু পর্যন্ত সওয়াব লেখা হয়। কিন্তু যেহেতু রোজা বিশেষ করে আমার জন্য তাই আমি নিজেই তার প্রতিদান দেব।”
তিনি আরো বলেন ,”রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মেসক আম্বরের চেয়েও বেশি প্রিয়।”
“রোজা গুনাহ থেকে বাঁচার ঢাল স্বরূপ।”
রোজাদারের রোজা আল্লাহর নিকট কবুল হলে তার জন্য কেয়ামতের দিন একটি দরজা হবে। সেই দরজা দিয়ে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে সে দরজাটির নাম হবে রাইয়্যান।”
“কেয়ামতের দিন রোজা আল্লাহর নিকট সুপারিশ করে বলবেঃ হে আল্লাহ এই ব্যক্তি আমার জন্য পান, আহার যৌন কাজ পরিত্যাগ করেছিল, তাই তুমি তাকে ক্ষমা করো।”
উল্লেখ্য এই যে, রোজাদার ব্যক্তি পবিত্র কোরআনের বিধি-বিধানের প্রতি লক্ষ্য যেমন মেনে চলবে, তেমনি নিষিদ্ধ কাজ গুলো পরিহার করে চলবে। এই সকল আদেশ-নিদেশ মেনে না চললে রোজার লক্ষ্য যেমন অর্জিত হয় না তেমনি ইহার সওয়াব কমে যায় সীমাহীন মাত্রায়।
হযরত বিশ্বনবী (সাঃ) বলেনঃ
যে ব্যক্তির মিথ্যা কথা ও পাপ কাজ থেকে বিরত না হয়, আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই যে সে পান ও আহার পরিত্যাগ করে চলবে।”
তিনি আরও বলেন, “পরকালের প্রতি পরিপূর্ণ ঈমান এবং সওয়াবের আশায় যে ব্যক্তির রোজা রাখবে তার পূর্ববর্তী যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।”
“এ মাসের একটি নফল একটি ফরজের সমতুল্য এবং একটি ফরজ ৭০ টি ফরজের সমান।”
হযরত নবী (সাঃ) আরও বলেছেন ইফতারের সময় “রোজাদার যে দোয়া করে তা কবুল হয়ে যায়, রোজাদারের এই সময়ের দোয়া কখনো ব্যর্থ হয় না।”

রোজার নিয়তঃ
নিয়ত ছাড়া রোজা হয় না নিয়ত করা ফরজ। মনে মনে রোজা রাখার ইচ্ছা করাই রোজার নিয়ত, এজন্য আরবি বা অন্য কোন ভাষায় নিয়তের শব্দ উচ্চারণ করা জরুরী নয়।
সুবহে সাদিকের পূর্বক্ষণ থেকে দুপুরে পূর্বে যে কোন সময় রোজা রাখার ইচ্ছা করলে নিয়ত হয়ে যাবে।
আসুন পবিত্র রমজানের শুরুতে নিজেদেরকে পরিশুদ্ধ করতে রোজার তাৎপর্য ও গুরুত্ব মনে প্রানে ধারণ করি,
রোজার আদব, নিয়ম কানুন অনুসারে সুস্থতার সঙ্গে রোজা পালন করি। ভাজাপোড়া স্বাস্থ্যহীন খাবার পরিত্যাগ করে স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী রোজা পালন সার্থক করে তুলুন এবাদত ও আমলের মাধ্যমে। একটা কথা সবসময় মনের রাখা প্রয়োজন এ বছর যারা রমজান পেলেন তারা সৌভাগ্যবান আগামী বছর নাও পেতে পারেন, আবার যারা গতবার পেয়েছিলেন তারা হয়তো আজ নেই! সকলের জন্য দোয়া ও যারা পরলোকগমন করেছেন তাদের আত্মার কামনা শান্তি কামনা এবং মাগফেরাত কামনা করি -জান্নাত নসিব হোক আমীন।
২০২৩

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :