April 19, 2024, 3:23 am

ই-কমার্স: ঈদে আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি পণ্য বিক্রি

রমজানের এক মাসে অনলাইনে কেনাকাটা গত বছরের চেয়ে বেড়েছে। কিছু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিক্রি গত বছরের চেয়ে কমলেও সামগ্রিকভাবে এ বছর ডিজিটাল বাণিজ্যে বেচাকেনার পরিমাণ অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।

দেশে ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ইক্যাব বলছে, এই ঈদে অনলাইনে সারা দেশে আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি পণ্য বিক্রি হয়েছে।

এ বিষয়ে ই-ক্যাবের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম শোভন বলেন, ‘গত দু বছর দোকানপাট বন্ধ থাকায় এমনিতেই ই-কমার্স খাতে বিক্রি বেশি ছিল। এবার সবকিছু খুলে যাওয়ায় অনেকেই আশঙ্কা করেছিলেন, এ বছর ঈদে বেচাকেনা কমতে পারে। তবে এক মাসের হিসাব থেকে আমরা দেখলাম এবার সামগ্রিকভাবে বিক্রি বেড়েছে।’

ই-ক্যাবের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, স্বাভাবিকভাবে দিনে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ও ফেসবুক পেজগুলোর মাধ্যমে দুই থেকে আড়াই লাখ ইউনিট পণ্য বিক্রি হয়। এবার রমজানের প্রথম তিন সপ্তাহে সেটা দৈনিক সাড়ে তিন লাখ ছাড়িয়ে যায়। আর শেষ ১০ দিনে সেটা সাড়ে চার লাখে পৌঁছায়। এসব পণ্যের গড় মূল্য দেড় হাজার থেকে ২ হাজার টাকা। সে হিসেবে এ বার ঈদে ডিজিটাল কমার্সে আড়াই হাজার কোটির বেশি বেচাকেনা হয়েছে। গত বছর এর পরিমাণ ছিল দেড় হাজার কোটি। সারা দেশের কুরিয়ার, লজিস্টিকস এবং ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ইক্যাব এই হিসাব করেছে বলে জানিয়েছে।

ই-ক্যাবের পরিচালক এবং উই—এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নাসিমা আক্তার নিশা জানান, ই-কমার্স সেক্টরে ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তাদের পণ্যের বিক্রিও এবার বেড়েছে। ঈদকে কেন্দ্র করে গত এক মাসে নারী উদ্যোক্তাদের ৫ কোটি টাকার বেশি পণ্য বিক্রি হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

নাসিমা আক্তার বলেন, আমরা যা আশা করেছিলাম ঈদের বেচাকেনা তার চেয়ে ভালো হয়েছে। আমাদের নারী উদ্যোক্তাদের কাঁচামাল সংগ্রহ করতে সমস্যার পড়তে হয়। এ বছর অনেক কাঁচামালের দামও বেড়েছে। তাই অনেক উদ্যোক্তাকে কিছুটা সমস্যায় পড়তে হয়েছে। তারপরও সামগ্রিকভাবে এবার বিক্রি ভালো।

গত দুবছর করোনার বিধিনিষেধের কারণে বড় সময় জুড়ে দোকানপাট বন্ধ থাকায় কেনাকাটার প্রধান মাধ্যম হয়ে পড়ে ই-কমার্স। করোনাকালে ৩০০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখেছে এ খাত। তবে গত বছর ২০ টির বেশি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠায় এই খাতের টিকে থাকাই শঙ্কার মুখে পড়ে যায়।

গত এক বছরে ১৫টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রায় অর্ধশত মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ইভ্যালি, কিউ কম, ই-অরেঞ্জের মালিকসহ বিভিন্ন সময় ৩৬ জন গ্রেপ্তার হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া সিরাজগঞ্জ শপ, দালাল প্লাসসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মালিক এখনো পলাতক। ই-কমার্সে খাতে শৃঙ্খলা আনতে গত জুলাইয়ে ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা জারি করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু এরপরেও গেটওয়েতে টাকা আটকে থাকা নিয়ে জটিলতায় পড়েন গ্রাহকেরা। এমন অবস্থায় এ বছর ই-কমার্সে কেনাকাটায় গ্রাহকেরা আগ্রহী হবে কি-না তা নিয়ে সংশয়ে ছিল প্রতিষ্ঠানগুলো। তা ছাড়া এবার দোকান পাট খোলা থাকার কারণেও ই-কমার্সে কেনাকাটা কমার আশঙ্কা ছিল ৷ কিন্তু ই-ক্যাব বলছে দোকান পাট খোলা থাকায় কিছু প্রতিষ্ঠানের বিক্রি কমলেও সামগ্রিকভাবে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, ‘ঈদের সময় এবার ই-কমার্স সেক্টরে প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশের মতো কেনাকাটা বেড়েছে। রোজার শেষের দিনগুলোতে সাড়ে চার লাখ ইউনিটের বেশি বিক্রি হয়েছে।’

তবে ঈদে বিক্রি বৃদ্ধির কথা মানতে চাইলেন না ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আজকের ডিলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম মাশরুর। তিনি বলেন, গতবারের চেয়ে এবার ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বিক্রি কমেছে। দোকান পাট খোলা থাকার কারণে এটা হতে পারে।

এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ই-ক্যাব মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম শোভন বলেন, ‘কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিক্রি হয়তো কমেছে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে সামগ্রিক বিক্রি কমেছে। এমন অনেক ব্র‍্যান্ডই এবার অনলাইনে বেচাকেনা করেছে, যারা গত বছর এই খাতে ছিল না। ফেসবুক পেজও বেড়েছে। তাই সব মিলিয়ে এবার বিক্রিটা বেশি হয়েছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :