April 25, 2024, 6:14 am

চুয়াডাঙ্গায় বিজয়ের মাসে জাতীয় পতাকার চরম অবমাননা : জেলা জুড়ে নিয়ম না মেনেই উড়ানো হচ্ছে পতাকা

মো. আব্দুর রহমান অনিক।।

বিশ্বকাপ ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে জেলাজুড়ে প্রায় ১ মাস আগে থেকেই বিভিন্ন দেশের পতাকা উঁড়াচ্ছেন ফুটবল সমর্থকরা। সেই সাথে বাংলাদেশের পতাকাকে নিয়ম না মেনে উঁড়ানোর মাধ্যমে পতাকার অবমাননা করে আসছে মানুষ।
শুরু হয়েছে বাঙালির তথা বাংলাদেশের বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। মহান মুক্তিযুদ্ধে এ মাসের ১৬ তারিখ পাকহানাদার বাহিনীর কাছ থেকে চূড়ান্ত বিজয়ের মাধ্যমে বাঙালি জাতির জীবনে সবচেয়ে গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হয়। বর্তমানে বিজয়ের মাসেও স্বাধীন সার্বভৌমত্বের প্রতীক বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাকে চরম অবমাননরা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ জানিয়েছে মুক্তিযোদ্ধা, সুশীল সমাজ ও সচেতন নাগরিকরা। তারা আরো জানান, ফুটবল প্রেমীরা যে দলের সমর্থন করেন সেই দলের পতাকা উড়িয়েছেন। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের পতকাও উঁড়ানো হচ্ছে সেখানে। কিন্তু পতাকা উড়ানোর যে একটা আইন ও নিয়ম রয়েছে সেটা পালন করা হচ্ছেনা। অভিযোগ রয়েছে, ফ্লাগ রুলস বা পতাকা আইনের বিষয়ে জানা নেই অধিকাংশ মানুষের। বিধি না মেনে পতাকা টানানো হলে শাস্তির বিধান আছে সেটাও জানেনা অনেকে। যার কারণে ফুটবল প্রেমী মানুষগুলো ভিন দেশী পতাকা বাড়ীতে টানানোর পাশাপাশি নিজ দেশের পতাকাকে নানাভাবে অবমাননা করছেন। যেখানে একই বাঁশ বা লাঠিতে একাধিক পতাকা উড়ছে। প্রায় সময়ে পতাকা একবার উত্তোলন করলে আর নামান না। অথচ নিয়ম বলছে, সূর্য অস্ত যাওয়ার আগে পতাকা নামাতে হবে। কেউ আবার দেশপ্রেমে মত্ত হয়ে লাঠির মাথায় ছোট্ট করে বাংলাদেশের পতাকা নিচে সমর্থিত দলের বড় পতাকা লাগিয়ে রেখেছেন।

বিশেষ বিশেষ দিবসগুলো যেমন,২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসসহ সরকারি প্রজ্ঞাপনে উল্লেখিত অন্যান্য দিবসগুলোকে বাংলাদেশের সর্বত্র সরকারি-বেসরকারি ভবনগুলো ও অফিসগুলোতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলনের জন্য নির্দেশনা থাকে। কিন্তু তখন মানুষ এভাবে পতাকা উড়ান এমন দৃশ্য চোখে পড়েনা । বিশ্বকাপ আসলেই ভিনদেশী পতাকা নিয়ে মাতামাতি আর নিজ দেশের জাতীয় পতাকার মান ক্ষুন্ন
করেন অনেকে।
এদিকে ফ্ল্যাগ রুলস’-এর ৪ ও ৭ বিধি বলছে, কিছু নিয়ম ও সুনির্দিষ্ট ছাড়া বেসরকারি জনসাধারণ কর্তৃক জাতীয় পতাকার যত্রতত্র ব্যাবহার নিষিদ্ধ। জাতীয় পতাকার প্রতি অবমাননা প্রদর্শন করা বা জাতীয় পতাকার প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন না করলে ওই ব্যক্তিকে ২০১০ সালের ২০ জুলাই প্রণীত আইন অনুযায়ী ৫ হাজার টাকা জরিমানা বা এক বছরের কারাদণ্ড কিংবা উভয়দণ্ডের বিধান রয়েছে।

বীর মুক্তিযোদ্ধারা বলেন বীর শহিদদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা। জাতীয় পতাকাকে অবমাননা বা অসম্মানকে কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। চুয়াডাঙ্গার সিনিয়র সচেতন নাগরিকরা দৈনিক পদ্মা সংবাদ কে জানান, যখন দেখি রাতের বেলা আমার দেশের পতাকা উড়ানো হচ্ছে তখন হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। জাতীয় পতাকার অবমাননা করার অর্থ হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করা। স্বাধীন বাংলাদেশকে অস্বীকার করা। আবেগের বসে জাতীয় পতাকা ব্যবহার করতে গিয়ে আমাদের ত্যাগ, কষ্টে অর্জিত এ পতাকার প্রতি যদি অবমূল্যায়ন করা হয়, তাহলে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মা কষ্ট পাবে। তিনি আরো বলেন, আমি আপনাদের মাধ্যমে প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানাই জাতীয় পতাকার অবমাননা ও অপব্যবহার রোধে তারা যেন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করেন।

২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসেও অনেক প্রতিষ্ঠান আমাদের জাতীয় পতাকা সঠিক নিয়মে উড়ায় না। পতাকা টানানোর দন্ডটা সোজা থাকতে হয় কিন্তু দেখা যায় অধিকাংশ স্থানেই বাঁকা দন্ডে পতাকা টানানো থাকে। পতাকার আইন আছে, এই আইনটার বিষয়ে মানুষকে সচেতন করা দরকার। জেলা তথ্য অফিসের মাধ্যমে মাইকিং করে প্রচারনা চালানোর দরকার। যাতে মানুষ সঠিক নিয়ম মেনে পতাকা টানায়। মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি পতাকা আইনে যে বিধান রয়েছে সেটা মানুষকে জানাতে হবে।

বিজয়ের মাসে পতাকার অবমাননার বিষয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা দরকার বলে বীর মুক্তিযোদ্ধারা অনেকে দাবি করছেন।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :