April 19, 2024, 5:45 am

সোনা পাচারকারীরা বেপরোয়া

সোনা পাচারকারীরা বেপরোয়া যশোরের শার্শা ও বেনাপোল এবং চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও জীবননগর সীমান্তে পৃথক ৫টি অভিযানে ৫ কোটি টাকার স্বর্ন বার উদ্ধার করেছে বিজিবি। যশোর সীমান্তের বিভিন্ন চোরাচালানী ঘাট ও আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট দিয়ে দীর্ঘদিন বিপুল পরিমান স্বর্ণের বার ভারতে পাচার করছে। আর শুধু ২৭ সেপ্টেম্বর একদিনেই উদ্ধার হয়েছে ওই স্বর্ণবার। আটক হয়েছে ৭জন বহনকারী।
দিনের পর দিন, বছরের পর বছর এসব অভিযানে শুধু বহনকারী শ্রমিকই আটক হয়ে আসছে। সোনা উদ্ধার ও বহনকারী আটকের পর মামলা হলেও পরবর্তী তদন্ত দূর্বল হওয়ায় চালানগুলোর মূল হোতাদের মুখোশ উন্মোচিত হয়না। আর এতে স্বর্ণ চোরাচালান ব্যবসায়ী গডফাদাররা থেকে যায় ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

স্থানীয় থানা ও বিজিবি সূত্র জানিয়েছে, বেনাপোল সীমান্ত এলাকা থেকে প্রাইভেট কারের মধ্যে থেকে ১ কেজি ৬০ গ্রাম ওজনের বড় ১ পিচ স্বর্ণ বারসহ দুই যুবককে আটক করেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি সদস্যরা। ২৭ সেপ্টেম্বর রাতে বেনাপোল পোর্ট থানাধীন পুটখালি এলাকা থেকে এ স্বর্ণের চালান উদ্ধার করা হয়। আটককৃতরা হচ্ছে, বেনাপোল পৌর এলাকার ছোট আঁচড়া গ্রামের ইসমাইল সরদারের ছেলে আশা (২৮) ও একই এলাকার নামাজ গ্রামের মৃত কালাম হোসেনের ছেলে সোহানুর রহমান বিশাল (২৭)।
খুলনা ২১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেপ্টেন্যান্ট কর্নেল তানভীর রহমান জানিয়েছেন, পুটখালি গ্রামের মসজিদ বাড়ি বিজিবি পোস্টে অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজন একটি প্রাইভেট কারের গতিরোধ করা হয়। এসময় প্রাইভেট কারটি তল্লাশী চালিয়ে পেছনের ছিটের পাপোশের মধ্যে লুকিয়ে রাখা ১ কেজি ৬০ গ্রাম ওজনের ১ পিচ বড় স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়। এসময় প্রাইভেট কারসহ দুই জনকে আটক করা হয়। উদ্ধারকৃত স্বর্ণের আনুমানিক বাজার মূল্য ৭৪ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। আটককৃত আসামিদের বিরুদ্ধে স্বর্ণ চোরাচালান আইনে মামলা দিয়ে বেনাপোল পোর্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, আসন্ন দূর্গাপুজা উপলক্ষে ভারতে যাতে কোন স্বর্ণ যেতে না পারে সে জন্য সীমান্ত এলাকা গুলোতে কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়েছে। যার ভিত্তিতে গত তিন দিনে ৩ কেজি ৯৬৯ গ্রাম স্বর্ণসহ চারজনকে আটক করা হয়।
স্টাফ রিপোর্টার বেনাপোল থেকে জানিয়েছেন, একই দিন রাত ৯ টায় বেনাপোল পোর্ট থানাধীন মালিপুতা আমড়াখালী বিজিবি পোস্টে অবস্থান নেয় একটি টহল দল। গোয়েন্দা তথ্যের বর্ণনা অনুযায়ী সন্দেহভাজন মোটরসাইকেলটি টহলদলের নিকটবর্তী হলে তা থামানোর সংকেত দেয়। এ সময় পালানোর চেষ্টা করলে বিজিবির টহল দল পিকআপযোগে ধাওয়া করে। মোটরসাইকেল চালক মালিপুতায় গিয়ে মোটরসাইকেল ফেলে চালক দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা করলে বিজিবি টহল দল পিকআপ থেকে দ্রুত নেমে তাকে ধরার জন্য পিছু ধাওয়া করে। কিন্তু সে গ্রামের মধ্যে দিয়ে পালিয়ে যায়। মোটরসাইকেলটি (রেজিষ্ট্রেশন নম্বর-ঢাকা মেট্টো-ল-১৭-৩২৫০ পালসার-১৫০ সিসি, রং-কালো) তল্লাশি করে হেড লাইটের কেসিং এর ভেতরে বিশেষ কায়দায় ফিটিং অবস্থায় ২ কেজি ১শ’ গ্রাম ওজনের ১৮ টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত স্বর্ণের মূল্য এক কোটি আটষট্টি লাখ টাকা। মোটরসাইকেলের মূল্য এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা।

শার্শা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, শার্শা সীমান্তের রুদ্রপুর গ্রামে সারের ব্যাগ থেকে ১০পিস সোনারবারসহ সাকিব হোসেন (১৯) নামে এক স্বর্ন পাচারকারীকে আটক করেছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি সদস্যরা। আটক সাকিব গোগা গ্রামের মৃত কামাল হোসেনের ছেলে। ২৭ সেপ্টেম্বর সকাল ১০ টার দিকে রুদ্রপুর গ্রামের আজগরের আমবাগান থেকে স্বর্নের বারসহ পাচারকারী সাকিবকে আটক করা হয়।
খুলনা ২১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেপ্টেন্যান্ট কর্ণেল তানভীর রহমান পিএসসি জানিয়েছেন, পুজার সময় পাশের দেশ ভারতে স্বর্ণের ডিমান্ড ও চাহিদা বেশি থাকায় সীমান্ত দিয়ে স্বর্ণের চালান বেশি পাচার হয়ে থাকে। বিএসবির (গোয়েন্দা) গোপন তথ্যে রুদ্রপুর গ্রামের আজগরের আমবাগানে অভিযান চালিয়ে সাকিব নামে ওই স্বর্ন পাচারকারীকে একটি সারের ব্যাগসহ আটক করা হয়। পরে সাকিবকে ক্যাম্পে নিয়ে সারের প্যাকেটের ভিতর তল্লাশী করে ১০ পিস সোনার বার পাওয়া যায়। এ সময় পাচারকারী স্বীকার করে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে কৌশলে সারের ব্যাগের মধ্যে লুকিয়ে সোনারবারগুলো ভারতে পাচার করার জন্য সীমান্তের দিকে যাচ্ছিল এবং এই স্বর্ণগুলো রুদ্রপুর গ্রামের সালামের মোড় নামক জায়গা থেকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির কাছ থেকে নিয়েছিলেন। যার ওজন ১ কেজি ২৩৩ গ্রাম, বাজার মূল্য প্রায় ৯০ লাখ টাকা।
এদিকে মেহেরপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ২৮ সেপ্টেম্বর ভোর পৌনে ৬টার দিকে মেহেরপুর শহরের শিব মন্দীরের পাশে জোছনা বেকারির সামনে থেকে ৬টি স্বর্ণবারসহ দুই জনকে আটক করা হয়। এরা হচ্ছে নারায়নগঞ্জের বন্দর এলাকার মৃত আব্দুল মান্নানের ছেলে মাসুদ রানা (২৪) ও ঢাকার ১৮ নয়াতলা, মগবাজার এলাকার শেখ আশরাফুল কবীরের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা (৪০)।

থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, আটককৃতরা ঢাকা থেকে বাসে করে এসে মেহেরপুর শহর হয়ে কাথুলি বাসস্ট্যান্ডের উদ্দেশে রওনা দেন। শহরের জোছনা বেকারির সামনে সদর থানার টহল পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফরিদ ও সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মিঠুন তাদের সন্দেহভাজন মনে করে তল্লাশি করতে চান। পরে তাদের তল্লাশী করে শরীরে কালো স্কচটেপ মোড়ানো ছয়টি স্বর্ণের বার পাওয়া যায়, যার আনুমানিক মূল্য ৪৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
জীবননগর চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার গয়েশপুর সীমান্ত থেকে চারটি স্বর্ণের বারসহ তাজমুল হোসেন (৩০) নামে এক পাচারকারীকে আটক করে বিজিবি। ২৬ সেপ্টেম্বর রাত ৮টার দিকে জেলার জীবননগর উপজেলার গয়েশপুর গ্রামের জাকামোল্লা ব্রিকস নামে একটি ইটভাটার কাছ থেকে তাকে আটক করা হয়। আটক তাজমুল হোসেন জেলার জীবননগর উপজেলার গোয়ালপাড়া গ্রামের সখের আলীর ছেলে। ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহেশপুর ৫৮ ব্যাটালিয়ন থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
উল্লেখ্য, এর আগে কয়েকটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিজিবি ও যশোরের কয়েকটি থানা সূত্রে তথ্য মেলে, করোনার সময় ২০২০ সালে বিজিবি ৪১ কেজি ৭শ’ ২২ গ্রাম সোনা জব্দ করে। যার মূল্য ২৭ কোটি ৯৩ লাখ ৮২ হাজার ৩শ’৪০ টাকা। ২০২১ সালে উদ্ধার হয় ১৩ কেজি ১শ’৪৩ গ্রাম সোনা। যার মূল্য ৯ কোটি ৫ লাখ ছয় হাজার টাকা এবং ২০২২ সালের মার্চে উদ্ধার হয় ১ কেজি ১শ’ ৬৫ গ্রাম সোনা। যার মূল্য প্রায় এক কোটি টাকা।

এদিকে অপর একটি সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ৯ আগস্ট রাতে শার্শার শিকারপুর বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা রাত ১০টার দিকে মহিউদ্দিন নামে একজনকে আটক করে। মহিউদ্দিনের কাছে থাকা ব্যাগ থেকে ৬শ’২৪ পিচ সোনার বার উদ্ধার করা হয়। যার ওজন ৭২ কেজি সাড়ে ৪শ’ গ্রাম। যার দাম ৩৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে বেনাপোল এলাকা থেকে জব্দ ১৯ কেজি ৩০৪ গ্রাম স্বর্ণের দাম ওই সময় ছিল ১৩ কোটি ৫১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এ ব্যাপারে ওই অর্থ বছরে বেনাপোল পোর্ট থানায় হয়েছিল ১৯টি মামলা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :